রহমত নিউজ 30 October, 2024 11:12 PM
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর গণহত্যা নিয়ে সর্ববৃহৎ ডকুমেন্টশন “শাপলানামা”-এর সম্পাদককে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় প্রতিবাদে করেছেন লেখক ও আলেম সমাজ।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বাইতুল মোকাররমের পূর্ব গেইটে সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লেখক ও সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ জানান, নিজের ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে আমি এই ইসলামিক বইমেলাতে আসি। এবং এখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাই। এরপর ইসলামিক বইমেলা থেকে রাত সোয়া আটটার দিকে নিজ ঠিকানা চাষাড়া নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য মেয়র মোহাম্মাদ হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আর ঠিক সেই সময়ে সাদা পোশাকে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি রাস্তার মধ্যেই বেশ খানিকটা সময় আমার সাথে রহস্যপূর্ণ আচরণ করার পর কোনো পূর্ব অভিযোগ ছাড়াই- ‘জানালায় কালো গ্লাস লাগানো এমন গাড়িতে’ করে আমাকে পল্টন থানায় তুলে নিয়ে যায়।
এরপর ঘণ্টাব্যাপী সেখানে অপরিচিত অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞসাবাদে তারা আমার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ বিতর্কিত সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সাথে আমার যোগসূত্র প্রমাণে আপ্রাণ অপচেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু শত চেষ্টা করার পরও তারা ব্যর্থ হয় এবং রাত সাড়ে ১২টার পর আমাকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে পল্টন থানা থেকে ছেড়ে দেয়।
কারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তা জানতে চাইলে পল্টন থানা পুলিশ আমাকে কোনো রকম সাহায্য করেনি। বরং তারা ওইসব ব্যক্তিদের পরিচয় লুকাতে চাচ্ছে। এবং বিভিন্ন সংস্থার কথা বলে নিজেদের দায় এড়াতে চেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের কোনো পরিচয় জানতে পারিনি। এরপর বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে আমি বইমেলা প্রাঙ্গনে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করলে আমাকে সংবাদ সম্মেলন না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। যা পরিষ্কারভাবে পতিত স্বৈরতন্ত্রের কর্মকাণ্ডের সাথে মিলে যায়। আবু সাইদ, মুগ্ধসহ হাজার শহীদদের আত্মত্যাগে অর্জিত নতুন স্বাধীনতায়, নতুন বাংলাদেশে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আমি মনে করি পরিবর্তিত বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে নিজেদের বের করে আনবে। আমি পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, যারা আমাকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় তুলে নিয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের পরিচয় জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করে অতিসত্বর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সেইসাথে নতুন বাংলাদেশ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এবং আগামীর নির্বাচিত সরকারকেও ভবিষ্যতে নিজস্ব স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে কোন লেখক, প্রকাশক, এ্যাক্টিভিস্টকে যেন এই স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হতে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এই দাবি সরকারকে মানতেই হবে। যদি না মানা হয়, তাহলে আমরা সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।’
এদিকে ‘চিরায়ত’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ (২২) তাকে সাদা পোশাকে পল্টন থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাসহ জঙ্গিবাদে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টার যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, খুবাইব মাহমুদকে পল্টন থানায় জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্ট অপপ্রচার সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় সময় গুলিস্তা এলাকা হতে খুবাইব মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিটিটিসির একটি দল রাজধানীর পল্টন থানায় নিয়ে আসে। তার বিস্তারিত পরিচয় এবং গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তার পরিবারে সংবাদ জানানো হলে রাত আনুমানিক ১২টায় সময় তার মামা মারগুবুসসুন্নাহ ও তার শিক্ষক মো. ইমদাদ হোসেন থানায় আসেন। পরে মুচলেকা গ্রহণপূর্বক খুবাইব মাহমুদকে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবাইব মাহমুদ প্রচার করেন যে, তাকে হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদ ও গুমের চেষ্টা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে গোয়েন্দা তথ্য যাচাই ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় আনা হয় এবং প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম হয়রানি বা গুম চেষ্টার অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ঘটনার প্রকৃত কারণ না জেনে এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানারকম মন্তব্য করছেন এবং অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। বর্ণিত বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করে অহেতুক অস্থিতিশীলতা তৈরি না করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়।